দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে, সেজন্য নিজ গ্রামে গিয়ে যুবদের অনাবাদি জমি কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তরুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। আজকের যুবকদের দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) পাল্টা স্যাংশন। আমাদের আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। যুবদের বলবো, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। নিজের গ্রামে গিয়ে প্রতিটি জমিকে কাজে লাগাতে হবে। চাষ করতে হবে, যেটাই হোক।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনোদিন যাতে দুর্ভিক্ষ না হয়, সেজন্য সব জমিতে চাষ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যদেরও বিরত রাখতে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকের যুব সমাজকে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ যুবদের কর্মসংস্থান দিয়েছে, বিএনপি হত্যা করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে নাকি আমাদের উন্নয়ন চোখে দেখে না। চোখ থাকতে অন্ধ হলে দেখবে কি করে? আমরা কত যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি। আর জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া? সবই তো একই ইতিহাস। হাজার হাজার যুব নেতাদের হত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, যুবলীগ আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অবস্থান আছে (অংশ নিয়েছে)। যুবক থাকলে কাজ করার অনেক সুবিধা। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যুবদের সম্পৃক্ত করতে যুবলীগ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তরুণরাই পারে দেশকে গড়ে তুলতে।
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
এর আগে, শুক্রবার দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার উপস্থিতির আনন্দে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশস্থল।
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশ। প্রথমে হয় সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান। এতে যুব অংশ নেন শিল্পী মমতাজ এমপি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই যুবলীগের প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমানের ক্রমধারা বর্ণনা ও তার সঙ্গে নৃত্যানুষ্ঠান ছিল অসাধারণ। এশিয়ার বৃহৎ এ যুব সংগঠনের উৎসবমুখর এই আয়োজনে সারাদেশ থেকে লাখ লাখ যুবক মিলিত হন। যোগ দেন হালের সেরা চিত্রনায়কদের অন্যতম রিয়াজ, ফেরদৌস ও চঞ্চল চৌধুরী।
১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রথিতযশা সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ আজ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে।